খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে চার বছরের শিশুকে! তবে যখন তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছিল, তখন সে ছিল একবছরের শিশু! এমন ঘটনা ঘটেছে মিশরে। যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া শিশুটির নাম আহমেদ মানসুর কারমি। একটি দু’টি নয়, তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যার অভিযোগ, আটটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ, একটি ভাঙচুর-লুটপাট-অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এবং সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া নিয়েও একটি অভিযোগ আনা হয়েছে! আর আদালতের নথি অনুযায়ী এ কাজগুলো সে করেছিল দ্বিতীয় জন্মদিনে পা দেওয়ার আগেই! আদালতের এমন রায় শুনে সমালোচনার ঝড় উঠে সারাবিশ্বে!
আহমেদ মানসুর কারমির জন্ম ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
তার বিরুদ্ধে হত্যা, লুটপাট, হুমকির অভিযোগ আনা হয় ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে। গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির কাছ থেকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে মুসলিম ব্রাদারহুড যখন তুমুল বিক্ষোভ করছিল, সেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় আহমেদ মানসুর কারমির নাম। তখন সে এক পা, দু’পা করে হাঁটতে শিখেছে।
অবশ্য মামলায় শুধু কারমিই অভিযুক্ত ছিলেন না। সঙ্গে ছিলেন আরও ১১৪ জন। মঙ্গলবার রায়ে তাদেরকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল ২০১৪ সালের শুরুতে পশ্চিম কায়রোতে। রায় ঘোষণার সময় কারমি আদালতে উপস্থিত ছিল না।
শিশুটির আইনজীবী ফয়সাল আল সায়েদ জেরুজালেম পোস্টকে জানান, শিশুটির নাম ভুল করে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু আদালত মানসুর কারমির জন্ম সনদ দেখতে চাননি। জন্ম দেখাতে পারলে প্রমাণ হতো যে, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে কারমির জন্ম হয়েছে।
ফয়সাল জানান, রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে মনসুর কারমির জন্ম সনদ দেওয়া হয়েছিল যখন তাকে অভিযুক্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু এরপর মামলাটি সামরিক আদালতে হস্তান্তর করা হয়। আদালতে কারমির অনুপস্থিতেই রায় ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, এতে প্রমাণিত হয় বিচারকরা মামলার নথিপত্র ভালো করে পড়েননি।
আরেক আইনজীবী জানান, এই মামলার রায় প্রমাণ করে মিসরে কোনও ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না।
এখন কর্তৃপক্ষ বলছে, ঐ শিশুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার বিষয়টি আসলে ভুলক্রমে হয়েছে। একই নামের ১৬ বছর বয়সী আরেকজনের দণ্ড এই শিশুটিকে ভুলে জানানো হয়েছিল। দেশটির সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন আদালতের কার্যক্রমে ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে।
No comments:
Post a Comment